ব্রাজিলের সুস্বাদু ফল জাবুটিকাবা এখন চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা বান্দরবনে শুরু হয়েছে ব্রাজিলের ফল জাবুটিকাবা চাষ। পাহাড়ি আবহাওয়া এ ফল চাষের উপযোগী হওয়ায় ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। দেখতে অনেকটা কালো আঙুরের মতো। কেউ কেউ দূর থেকে জ্যাম বলতেও ভুল করেন। কৃষি বিভাগ বলছে, পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় এ ফলের চাষ বাড়লে একদিন কৃষি অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।
২০০৬ সালে ব্রাজিল থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। সারাদেশে বিএডিসির ৯টি হর্টিক্যালচার এবং ৫৩টি ফার্মে জাবুটিকাবার চাষ শুরু হয়। জাবুটিকাবা ফল সবুজ বর্ণের এবং পাকলে কালো হয়। এটি পাকতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। বান্দরবানের হর্টিকালচার সেন্টার বাগানে এই ফলটির চাষ হচ্ছে। গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুরোটাই ফল ধরে।
জাবুটিকাবা গাছ
জাবুটিকাবা একধরনের ব্রাজিলিয়ান গ্রীষ্মকালীন ফল। ব্রাজিলিয়ান আঙুর গাছ নামেও পরিচিত এটি। প্রচলিত আঙুর গাছের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। তবে মিল আছে ফলের রং ও আকৃতিতে। ফলটিকে দ্রাক্ষাও বলা হয়। প্রত্যেক গাছের ফল সাধারণত ধরে গাছের শাখা-প্রশাখার প্রান্তে। কিন্তু জাবুটিকাবা একেবারেই ভিন্ন। ফলের মৌসুমে পুরো গাছের শরীরই থাকে ফলে মোড়া। গাছের কাণ্ডে হয় এই ফল।
দক্ষিণ ব্রাজিলের মিনাস, জারিয়াস ও সাওপাওলোতে সাধারণত এ ফলটির দেখা মেলে। পুরো গাছের শরীরজুড়ে ফল হয় বলে জাবুটিকাবা গাছ অসম্ভব সুন্দর এক রূপ ধারণ করে।
জাবুটিকাবা চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে
বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী চন্দ্র দে বলেন, বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে চারটি জাবুটিকবা গাছ রয়েছে। দীর্ঘ আট বছরে প্রচুর ফল ধরে এবং বছরে তিনবার গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। জবুতিকাবা গাছের ফলন দেখে বান্দরবানের কৃষকরা এ ফলের চারা সংগ্রহ করেছেন এবং ধীরে ধীরে অনেকেই এসব চারা রোপণের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন হর্টিকালচার সেন্টারের নির্দেশ অনুযায়ী, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উন্নত জাতের ফলের চাষ সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ব্রাজিল থেকে এ জাতটি আনা হয়েছে। বান্দরবানের হর্টিকালচার সেন্টারে চারা থেকে চারা এবং অন্য তিনটি মাদার প্ল্যান্ট থেকে প্রাপ্ত চারা সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করায় বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলার উদ্যমী উদ্যানপালকদের জন্য সহজ হয়েছে। পার্বত্য জেলার মাটি ও জলবায়ু ভালো হওয়ায় এ বিদেশি ফল চাষ করে কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
হর্টিকালচার সেন্টার বান্দরবানের উপ-পরিচালক মো. সাফায়েত আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, জাবুটিকাবা ব্রাজিলিয়ান লতা নামেও পরিচিত। এটি দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের স্থানীয় উদ্ভিদ হিসেবে বিখ্যাত। এটি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এই গাছ কিছুটা খরা সহনশীল। এর ফুল অনেকটা সাদা তুলোর মতো ফুটে এবং খুব দ্রুত প্রথমে সবুজ এবং পরে পছন্দসই রঙে পরিণত হয়। ফলগুলো কালো আঙুরের মতো সব গাছের ডালে ঢেকে দেয়, সৃষ্টি করে দারুণ নান্দনিক সৌন্দর্য।
জাবুটিকাবা পাকা ফলের ভিতরে চারটি বীজ থাকে। প্রজাতির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন আকার এবং বীজের সংখ্যা হতে পারে। ফলটি খেতে সুস্বাদু। পাকা ফল প্রাকৃতিকভাবে খাওয়া যেতে পারে। দক্ষিণ আমেরিকায়, এই ফলটি প্রধানত জুস এবং জ্যাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তিনি আরও জানান, কিছু কিছু জায়গায় যেখানে উৎপত্তিস্থল রয়েছে, সেখানে বছরে কয়েকবার ফুল ও ফল হয়।
জাবুটিকাবা ফলে অনেক ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এই চিরসবুজ গাছের বীজ এবং কাটার মাধ্যমে বংশবিস্তার করা হয়। বীজ থেকে চারা পর্যন্ত ফল ধারণ করতে 10 থেকে 20 বছর সময় লাগতে পারে, যদিও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে ফল ধারণের সময় পরিবর্তিত হতে পারে। কলম করার পাঁচ বছর পর থেকে ফল ধরা শুরু হয়।
অল্প পরিমাণে এর বিস্তার ঘটলেও এই ফলটিকে জনপ্রিয় করতে হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও চারা বিতরণ করা হচ্ছে। ফলের মৌসুমে গাছের প্রদর্শন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, ভোক্তার চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা অব্যাহত রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির অভাব থাকে এবং গাছটি কিছুটা খরা সহনশীল, তাই এলাকায় জাবুটিকাবা চাষ করা সম্ভব। সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে জাবুটিকাবা চাষ হলে পুষ্টির পাশাপাশি কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের হর্টিকালচার সেন্টার ছাড়াও জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ ও রংপুরের রহনপুরের বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারে রয়েছে জাবোটিকাবার ফলবান গাছ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে এর চারা পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: রাজশাহীর আম বিদেশে জনপ্রীয় হয়ে উঠছে