এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কর্মসূচি জোরদার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) উচ্চ পর্যায়ের এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান। মন্ত্রী আরো তিনি আরো জানান ”এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণে দেশে শিগগিরই ভ্যাকসিন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে “।
মুরগির এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগটিকেই সাধারনত বার্ড ফ্লু বলে। এটি পোল্ট্রির জন্য খুব মারাত্বক একটি বাইরাস জনিত রোগ। এই রোগে মৃত্যুর হার খুব বেশি এবং মহামারি আকারে এই রোগ ছড়ায়। এই মারাত্বোক এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার ভ্যাকসিন।

সম্প্রতি সময়ে পোল্ট্রি শিল্পে বার্ড ফ্লু ভাইরাস বা এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার লক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) যৌথভাবে রাজধানীর একটি হোটেলে এ সেমিনার আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, “খুব শীঘ্রই কারিগরী কমিটি গঠন করে ভ্যাকসিন নীতিমালা প্রণয়নের কাজ হাতে নেওয়া হবে। যে ভ্যাকসিন আমাদের দেশে উৎপাদন হচ্ছে সে ভ্যাকসিনের মান আরো উন্নত করে এর পরিসর বাড়ানো হবে। যে সব রোগের ক্ষেত্রে আরো ভ্যাকসিনেশন দরকার সে সব রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদন বাড়ানো হবে। আমাদের সক্ষমতা রয়েছে। প্রয়োজনে আরো বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে”।
প্রাণিসম্পদের প্রয়োজনীয়তা ও উন্নয়নের বিধয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, “মেধাবী জাতি তৈরিতে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ খাবার দরকার। সেক্ষেত্রে মাংস, মাছ, দুধ, ডিম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পণ্যগুলো যদি গুণগত মানসম্পন্ন না হয়, শুধু উৎপাদন বাড়িয়ে মেধাবী জাতি সৃষ্টি করা যাবে না। সে জন্য মানসম্পন্ন পণ্য তৈরিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কাজ করছি। আমাদের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার রয়েছে, এর পরিসর আরো বাড়ানো হবে। কী কী প্রক্রিয়ায় গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়গুলোও গভীরভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
প্রাণিসম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী আরো বলেন,“প্রাণিসম্পদ খাতকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করতে চাই। এ খাত বেকারত্ব দূর করায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে, মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছে, খাবারের একটি বড় যোগান দিচ্ছে, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে ভূমিকা রাখছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও এ খাত একটি বড় ধরনের সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করবে। এ খাতকে আমরা যত সমৃদ্ধ এবং গুণগত মানে উন্নত করতে পারবো, এ খাত ততই আমাদের কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রোগ নিয়ন্তনে সরকারের অবস্থান উল্লেখকরে তিনি আরো বলেন, “একসময় দেশে বার্ড ফ্লু নিয়ে শঙ্কিত অবস্থা ছিল। সেখান থেকে অমাদের উত্তরণ হয়েছে। প্রতিবেশি দেশ থেকে কোনভাবে যেন বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ঘটতে না পারে সে জন্য সীমান্তে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। জুনোটিক রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি জায়গায় প্রতিটি স্তরে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে”।
উক্ত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান। বিশেষ অতীথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ। এছারাও উপস্থিত ছিলেন বিএলআরআই (বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট) এর মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল জলিল ও FAO বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন।
সেমিনারে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ও ড. মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ (বিএলআরআই)। উক্ত সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিএলআরআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রাণিসম্পদ খাতের বিজ্ঞানী, গবেষক ও উদ্যোক্তাগণ।